পাট শিল্পে উদ্ভাবনে উৎসাহিত করলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রীর সভা
কলকাতা, সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বিশ্বজিৎ দে:কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রী শ্রী গিরিরাজ সিং আজ কলকাতার ভারতীয় পাট শিল্প গবেষণা সংস্থায় (ইজিরা) এক সভায় ভাষণ দেন। সেখানে তিনি ভারতের অর্থনীতিতে পাট শিল্পের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এই শিল্পকে আন্তর্জাতিক বাজারে আর-ও প্রতিযোগীমূলক করে তুলতে উদ্ভাবনের গুরুত্বের কথা বলেন। মন্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির তৈরি নতুন ও আরও দক্ষ যন্ত্রের নমুনা পরিদর্শন করেন এবং পাট আঁশের মান নির্ধারণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক শিল্প মডেলের চলমান কাজের খোঁজ নেন। তিনি বলেন, এই ধরনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মানের মাপকাঠির উন্নয়নে, চাষীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে এবং বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।পাট ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক তন্তু বা আঁশ, যা মূলত পূর্ব ভারতে চাষ হয়। পাট তৈরির প্রক্রিয়ায় কয়েকটি ধাপ রয়েছে — জাগ দেওয়া, আঁশ বের করা, সুতো তৈরি ও বুনন। জাগ দেওয়ার প্রচলিত পদধতিতে প্রচুর জলের প্রয়োজন এখনও একটি প্রধান সমস্যা। অন্যদিকে সুতো কাটা ও প্রস্তুতির অনেক যন্ত্রই পুরনো এবং স্বাভাবিক ভাবেই খরচ সাপেক্ষ। এই সীমাবদ্ধতাগুলি উৎপাদনশীলতা কমায় এবং চাষীদের আগ্রহ সীমিত রাখে। কম জলে জাগ দেওয়া এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক আঁশের মান নির্ধারণের মতো নতুন প্রযুক্তি এই সমস্যাগুলি লাঘব করবে, ভাল মানের আঁশ দেবে এবং আমদানি করা যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমাবে বলে আশা করা হচ্ছে।ইজিরার বিজ্ঞানীরা শ্রী সিংকে জানান যে দুটি উন্নত যন্ত্রের অর্ডার দেওয়া হয়েছে এবং চীনা যন্ত্রের ওপর ভারতের নির্ভরশীলতা কমছে। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের লাভের চিন্তা যেকোনো নতুন প্রযুক্তির মূলে থাকবে। তিনি এছাড়াও যন্ত্র নির্মাণে উদ্ভাবনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন, যেমন খরচ কমাতে লোহার বদলে কার্বন ফাইবার ব্যবহার। তিনি সরকারের “এক মিল এক গ্রাম” উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন, যা পাট প্রক্রিয়াকরণকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ জীবিকা গড়ে তোলার লক্ষ্য রাখে। মন্ত্রী বলেন, ভারত যদি সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ করতে চায় তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাকৃতিক তন্তুর উল্লেখযোগ্য উন্নতি দরকার। পাটের সঙ্গে অন্যান্য কাপড়ের মিশ্রণ ফ্যাশনের ক্ষেত্রে এর চাহিদা বাড়াতে পারে এবং রপ্তানি বর্তমানের ৪,০০০ কোটি টাকার চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।শ্রী সিং বাঁশ ও শীশামের মতো সহযোগী কৃষির গবেষণার কথাও তুলে ধরেন। বাঁশের প্রথম ফসল আসতে চার বছর লাগলেও এর পর প্রতি এক থেকে দু’বছরে ফসল কাটা যায়। আরও সুবিধা হল ভূগর্ভস্থ জলের পুনর্ভরণ এবং মিশ্র চাষ ব্যবস্থায় সহায়তা।মন্ত্রী শেষে কলকাতার প্রতিষ্ঠানগুলির কাজকে স্বীকৃতি দেন। ইজিরা, কেন্দ্রীয় পাট ও সহযোগী আঁশ গবেষণা ইনস্টিটিউট (ক্রিজাফ, এবং জাতীয় প্রাকৃতিক তাঁত প্রকৌশল ও প্রযুক্তি সংস্থার (নিনফেট) মত সংস্থাগুলি চাষী, শিল্প ও নীতি নির্ধারকদের মধ্যে সেতুর কাজ করে। তিনি বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম পাট উৎপাদক হিসেবে ভারতের রয়েছে প্রাকৃতিক আঁশ প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা। সুস্থায়ী উদ্ভাবন ও বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে উচ্চতর বৃদ্ধি এবং আশাপ্রদ আন্তর্জাতিক উপস্থিতি সম্ভব হবে বলে তিনি আস্থা ব্যক্ত করেন।